নিজের জমিতেই আঙ্গুর চাষ করুন
আঙ্গুর একটি জনপ্রিয় ফল । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটা বানিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে । এটা একটা বহুবর্ষজীবি বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ যা সুস্বাদু রসালো ফল দিয়ে থাকে । এতে রয়েছে ভিটামিন বি, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন এটি যেমন ফল হিসেবে খাওয়া হয় তেমনি এটা হতে জ্যাম, জেলি, ভিনেগার, জুস ও বীজ হতে তেল তৈরি করা যায় । ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, তুর্কি, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, পর্তুগাল, আর্জেন্টিনা, ইরান, ইটালি, চিলি আঙ্গুর চাষ হয়ে থাকে । তবে চীন সবচেয়ে বেশী চাষ করে থাকে । আঙ্গুরের রয়েছে বিভিন্ন গুনাগুন । ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, হার্ট ভালো রাখতে ও এ্যাজমার সমস্যায় এটা খুবই উপকারী । এছাড়াও হাড় গঠনে এবং চুল ও ত্বকেও এর ভূমিকা রয়েছে মাটি বিভিন্ন ধরনের মাটিতে এটি জন্মাতে পারে ।
তবেআঙ্গুর চাষের জন্য দো- আঁশযুক্ত লালমাটি নির্বাচন করা শ্রেয়, এবং উর্বর জমি যার পানি ধারন ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত বেশি এবং Ph এর মান ৬ · ৫- ৮ · ৫ । আঙ্গুরের জাত আমাদের দেশে তিন জাতের উৎপাদনশীল আঙ্গুর গাছের চাষ করা হয় ।
জাককাউ, ব্ল্যাক রুবী ও ব্ল্যাক পার্ল । তিনটি জাতই গ্রীষ্মকালীন এবং পরে তিনটি রঙের রূপান্তরিত হয়ে যথাক্রমে হালকা বাদামি, কালো ও করমচা রং ধারণ করে । প্রথমবার ফলন আসতে সময় লাগে প্রায় দু’বছর । জমি প্রস্তত উত্তমরূপে জমি প্রস্তুত করার জন্য তিন থেকে চার বার চাষ দিতে হবে । মাটিকে ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে । পানি দাঁড়িয়ে থাকবে না এবং প্রচুর সূর্যালোক সমৃদ্ধ জমি নির্বাচন করা ভাল । বপন পদ্ধতি Root cutting পদ্ধতি ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে করা হয় । Knifing system এর জন্য ৩ * ৩ মিটার দূরত্ব এবং dome system এর জন্য ৫ * ৩ মিটার দূরত্বে বপন করতে হবে এবং এগুলো ১ মিটার গভীরে বপন করতে হবে ।
আরও পড়ুনঃ অ্যাভোক্যাডোর ৭টি প্রমাণিত স্বাস্থ্য উপকারিতা সার প্রয়োগ নতুন গাছের জন্য এপ্রিল মাসে ইউরিয়া@ ৬০ গ্রাম ও মিউরেট অফ পটাশ মিউরেটস অব পটাশ@ ১২৫ গ্রাম । এই একই ডোজ পুনরায় জুন মাসে দিতে হবে । পুরাতন গাছের জন্যও অনুরুপ ভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে । কিন্তু প্রুনিং এর পর গোরবর সার ও এস এস পি পুরো ডোজ প্রয়োগ করতে হবে । সেইসাথে অর্ধেক ডোজ নাইট্রোজেন ও পটাশিয়াম প্রয়োগ করবে । বাকি হাফ ডোজ নাইট্রোজেন ও পটাশিয়াম প্রয়োগ করতে হবে এপ্রিল মাসে ফল আসার পর । দুইবার ইউরিয়া স্প্রে করতে হবে । একবার ফুল আসার পর আরেকবার ফল আসার পর ।
আগাছা দূরীকরণ মার্চের শুরুতে যখন জমি চাষ করতে হবে তখন Stomp@ ৮০০ মিলি প্রতি একর জমিতে দিতে হবে । তারপরে Gramoxone 24 WCS( paraquat) অথবা Glycel 41 SL( glyphophate)@১.৬ লিটার প্রতি একরে ১৫০ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে যখন আগাছার উচ্চতা ১৫- ২০ সেমি হবে আঙ্গুর গাছের কান্ড ছাঁটাই রোপণ করার পরবর্তী বছরের শুরু দিকে আঙ্গুর গাছকে মাচায় নিতে হবে ।
এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে মাচায় ছড়িয়ে থাকা আঙ্গুর গাছের কান্ড ছেঁটে দিতে হবে । কান্ড ছাঁটাই করলে আঙ্গুর গাছের ফলন বৃদ্ধি পায় এবং ফুল ঝরে পড়া কমে যায় । ছাঁটাইয়ের ৭ দিন পূর্বে এবং ৭ দিন পরে এর গোড়ায় হালকা সেচ দিতে হয় ।
গাছ রোপণের পর মাচায় ওঠা পর্যন্ত প্রধান কাণ্ড ছাড়া অন্য সকল পার্শ্ব কাণ্ডসমূহ অবশ্যই ভেঙ্গে ফেলতে হবে । প্রথম ছাঁটাই মাচায় কান্ড ওঠার পর৩৫/৪৫ সেমি হলে প্রধান কান্ডের শীর্ষ অংশ কেটে দিতে হবে, যেন কান্ডের দুই দিক থেকে দুটি করে মোট চারটি শাখা গজায় । দ্বিতীয় ছাঁটাই প্রথম ছাটাইয়ের পর গজানো চারটি শাখা বড় হয়ে ১৫- ২০ দিনের মাথায়৪৫/৬০ সেমি লম্বা হলে এর চারটি শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে । কাটা প্রান্ত থেকে আগের মতো দুটি করে আরও ১৬টি প্রশাখা গজাবে । তৃতীয় ছাঁটাই এই ১৬টি প্রশাখা ১৫ থেকে ২০ দিনের মাথায় ৪৫- ৬০ সেমি লম্বা হলে আবার এদের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে যাতে প্রতিটি প্রশাখা থেকে একইভাবে ৪টি নতুন শাখা এবং এমনিভাবে ১৬টি শাখা থেকে সর্বমোট ৬৪টি শাখা পাওয়া যাবে । এই শাখার মধ্যে প্রথমে ফুল এবং পরে এই ফুল মটর দানার মত আকার ধারণ করে আঙ্গুর ফলে রূপান্তরিত হবে । প্রথম বছর ফল পাবার পর শাখাগুলোকে ১৫- ২০ সেমি লম্বা রেখে পরবর্তী ফেব্রুয়ারী মাসে অর্থাৎ বসন্তে ছেঁটে দিতে হবে । ফলে বসন্তের শুরুতে আরও কিছু নতুন শাখা গজাবে এবং ফুল ধরবে । এই পদ্ধতি ৩- ৪ বছর পর্যন্ত চলবে । আঙ্গুর গাছের রোগ- বালাই পোকার আক্রমণ গুবরে পোকা এরা কচি পাতা খেয়ে ফেলে । পাতার শিরার অংশ বাকি রেখে পুরো পাতা খেয়ে থাকে ।
দমন :-
ম্যালাথিয়ন@ ৪০০ মিলি প্রতি ১৫০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে থ্রিপস এবং জ্যাসিড এরা মূলত পাতা ও ফলের রস শোষন করে । পাতার নিচের অংশের রস খেয়ে ফলে ফলে পাতার উপরে সাদা দাগ পড়ে ।
দমন :-
ম্যালাথিয়ন@ 4৪০০ মিলি প্রতি ১৫০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । পত্র মর্দনকারী পোকা বা লীফ রোলার এই বিছা পোকারা পাতাকে কুঁকড়ে ফেলে । এটা ফুল ও খেয়ে ফেলতে পারে ।
দমন :-
কুইনাফোস@ ৬০০ মিলি প্রতি ১৫০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । হলুদ ও লাল বোলতা পরিপক্ক ফলকে ছিদ্র করে এবং খেয়ে ফেলে ।
দমন :-
কুইনাফোস@ ৬০০ মিলি প্রতি ১৫০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । আরও পড়ুনঃ থাই পেয়ারার চাষ ও পরিচর্যা রোগ নিয়ন্ত্রণ পাউডারি মিলিডিউ পাতায় ও ফুলের মধ্যে পাউডার এর মত পদার্থ দেখা যায় ।
রোগ দমন :-
কার্বেনডাজিম@ 400 গ্রাম অথবা ভেজা সালফার@ 600 গ্রাম ফুল ও ফল আসার আগে স্প্রে করতে হবে ডাউনি মিলিডিউ পাতার উপরের অংশে হলুদ ছাপ ও পাতার আকৃতি নষ্ট হয়ে যায় । পাতার নিচের অংশে সাদা ফাংগাস তৈরি হয় । রোগ দমন প্রথম স্প্রে – ম্যানকোজেব@ ৪০০- ৫০০ গ্রাম প্রুনিং এর সময় । দ্বিতীয় স্প্রে – প্রথম স্প্রে এর ৩- ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় স্প্রে করতে হবে । তৃতীয় স্প্রে করতে হবে পাতা গজানোর পর এবং চতুর্থ স্প্রে করতে হবে ফুল আসার পর । এনথ্রাকনোস ফল, ডাল, শাখায় গভীর ক্ষত দেখা যায় পাতার উপর বাদামি রঙের দাগ দেখা যায় ।
দমন :-
কপার অক্সিক্লোরাইড অথবাM-45@400 গ্রাম প্রতি 150 লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । ফল সংগ্রহ আঙুর পরিপক্ক হলে সংগ্রহ করতে হবে । ফল সংগ্রহ করার পর তা বাছাই করতে হবে । তারপর ছয় ঘন্টা ধরে সেগুলো ৪ · ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হবে । সবশেষে প্যাকেট করে কনটেইনারে ভরে বাজারে জাত করতে হবে ।
Similarity 12%
Jubo Agro - লাল আঙ্গুর চাষ এবং এর পরিচর্যাJubo Agro - 🍇সীডলেস আঙ্গুর🍇 🍇আঙ্গুর খেতে আমরা সবাই পছন্দ ...
এই একই ডোজ পুনরায় জুন মাসে দিতে হবে। পুরাতন গাছের জন্যও অনুরুপ ভাবে সার প্রয়োগ করতে ...Apr 1, 2021 — কিন্তু প্রুনিং এর পর গোরবর সার ও এস এস পি পুরো ডোজ প্রয়োগ করতে হবে।
Similarity 6%
ফলের গবেষণা ও উন্নয়ন, বিএআরআই | Gazipur
দমন কার্বেনডাজিম @400 গ্রাম অথবা ভেজা সালফার @600 গ্রাম ফুল ও ফল আসার আগে স্প্রে করতে হবে৷